” শাল কাঁদে, পিয়াল কাঁদে, কাঁদে মহুলবন/ অযোধ্যা পাহাড়ে বসে কাঁদে হামার মন…” এ কান্না চিরদিনের।
বনভূমি থেকে পেরিয়ে এ গ্রাম থেকে ওগ্রাম বয়ে যায় কান্নার স্রোত। আজ, কান্নায় মিশে গেছে আগুন। জ্বলে পুড়ে খাঁক হয়ে যাচ্ছে বুকের অন্দরমহল। পলাশভূমি লাল হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সে লাল আগুনের, বনভূমি পুড়ে যাওয়া লাল, পশুপাখি পুড়ে যাওয়া লাল, গাছপালা পুড়ে যাওয়া লাল… গত চার-পাঁচদিন ধরে পুরুলিয়া জেলার অযোধ্যা, মাঠা, পাখি পাহাড়, সিকরা, শুশুনিয়া সহ অনেক পাহাড়ে লেগেছে আগুন।
এ ঘটনা নতুন নয়। প্রতিবছর ঘটে। কিন্তু এবছর এই বিশাল পরিমাণে ঘটার পেছনে ঠিক কী কারণ থাকতে পারে? প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগের ফলে ঘটেছে বলে তো মনে হয়না। নেপথ্যে ভেসে আসছে নানান কারণ, শোনা যাচ্ছে কাঠ মাফিয়ারাই এভাবে আগুন লাগিয়ে ঘুরছেন। অযোধ্যার দামি দামি শাল, পিয়ালের মতো গাছগুলো চলে যায় উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড, দক্ষিণ ভারতে। আর এই কাঠ পাচারের সাথে যুক্ত রয়েছে বন দপ্তর থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসনও। সে যে কারণেই ঘটুক না কেন এ খবর নিউজ চ্যানেলে দেখানোর মতো নয়। কারণ পাবলিক এটি খাবে না। এখন ‘খেলা’ নিয়ে মেতে থাকা ভালো। দেওয়াল লিখন নিয়ে, রং বদলে যাওয়া নিয়ে মেতে থাকা ভালো। কিন্তু রং যে এদিকেও বদল ঘটছে। সবুজ থেকে হয়ে উঠছে লালে লাল। রাজনৈতিক না হোক, বদল তো ঘটছে।
মনে করিয়ে দেওয়া ভালো, আমাজন পুড়ে যাওয়ার সাথে সাথে অযোধ্যাও কিন্তু পুড়েছিল। তাই, এখনও সময় আছে যতটা সম্ভব এগিয়ে আসার এ আগুন নেভানোর জন্য। বনদপ্তরের অপেক্ষায় না থেকে আপনিও আসুন। এখন এভাবে পুড়তে থাকলে আপনার দুইদিনের পিকনিক স্পটের অবস্থা কি হবে বুঝতে পারছেন? আপনি কোনোদিন আর ‘ভালোবাসা মানেই অযোধ্যা পাহাড়’ বলে, চুলে পলাশ ফুল গুঁজে কিংবা পলাশফুলের মালা পরে এই বসন্তে আপনার ফেসবুক ডিপি/ কভার চেঞ্জ করতে পারবেন না। তখন সেইসব পুরোনো ছবি দেখিয়ে আপনার পরবর্তী প্রজন্মকে বলতে পারবেন তো – “এখানে অযোধ্যা নামের এক পাহাড় ছিল! সেখানে অনেক অনেক স্মৃতি জমে আছে…”
ছবি : সংগৃহীত | সৌরভ মাহান্তী