Bengal Chronicle

মিশরের সবচেয়ে সুন্দরতম মন্দির এডফু

এডফু

সেই ছোটবেলা থেকেই মিশরের সপ্তম আশ্চর্যের প্রথম আশ্চর্য পিরামিড, নীলনদ, এসবের কথা শুনে, আর তাদের কথা ভেবে বিস্মিত হতাম। তবে সেইসময় স্বপ্নেও কখোনো ভাবিনি, কোনো দিন এদের দেখতে হাজির হয়ে যাব মিশরে। ১৯৬৩ সালে নির্মিত বিখ্যাত এবং তৎকালীন সবচেয়ে ব্যায়বহুল, এবং অভাবনীয় জাঁকজমকপূর্ণ ইংরাজী সিনেমা ক্লিওপেট্রা দেখার পর, সেই বিস্ময় বেশ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সেই ছবিতে ক্লিওপেট্রার বিজয়ীরূপে রোমে প্রবেশের অভাবনীয় জাঁকজমকপূর্ণ দৃশ্য যেন আজও মনের মধ্যে গেঁথে আছে। তাই গত বছর ফেব্রুয়ারীতে হঠাৎই মিশর ঘুরে দেখতে যাবার সুযোগ পেয়ে যার পর নাই পুলকিত হই, এবং ১৯শে ফেব্রুয়ারী ২০২০ বেরিয়ে পড়ি মিশরের উদেশ্যে।

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার বিষয়ে দুচার কথা

মিশরের অতিপ্রাচীন সভ্যতাই পৃথিবীর আদিমতম, এমন কথা বলা চলে না ঠিকই, কিন্তু, নিঃসন্দেহে তা ছিল পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা দৃষ্টি আকর্ষক, তথা দৃষ্টিনন্দন এবং তার ব্যাপ্তি ছিল সব চেয়ে বেশী। পৃথিবীর দীর্ঘতম মহান নদী নীলের অববাহিকায়, উর্বর অঞ্চলের অশেপাশে, উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার এই অঞ্চলেই, বিশ্বে প্রথম কৃষিকাজের শুরু। এবং তার সাথেসাথে, সংঘবদ্ধ মানুষের বসতি স্থাপন এবং সভ্যতার উন্মেষ হয় এই অঞ্চলেই, যাকে আজ আমরা মিশর নামে জানি। একই সঙ্গে উন্নত জীবনযাত্রার পত্তন এবং উন্নত সাংস্কৃতিক ধারার প্রবাহের শুরুও হয় এই সময় থেকেই। প্রাচীন মিশরের সভ্যতার উন্মেষ পাঁচ হাজার বছরেরও আগে, এবং তা সগৌরবে চলতে থাকে তিন সহস্রাব্দেরও বেশী সময় ধরে। তবে, এই উন্নত সভ্যতার এত বড় একটি খবর, এরপর আক্ষরিক অর্থেই সাহারা মরুভূমির বালুকারাশির নিচে চাপা পড়ে থাকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, বাকি মানব জাতির কাছে অজ্ঞাত থেকে যায়। এরপর, তার প্রকৃত খোঁজ পাওয়ার শুরু হয়, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে তথা উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে।

মিশরের প্রাচীন এই সভ্যতার প্রতি মুগ্ধতা, তা আজকের কোনো বিষয় নয়। তা চলে আসছে সেই ক্ল্যাসিকাল গ্রীকো-রোমান যুগ থেকে। সেখানকার সবচেয়ে আর্কষণীয় পূরাতাত্বিক নির্দশনাবলী – বিশেষতঃ, গিজার পিরামিডসমূহ তথা স্পিংস এবং ভ্যলি অফ কিংস’এর রাজকীয় স্মৃতি স্মারকগুলি, সেই ক্ল্যাসিকাল সময় থেকেই, ভ্রমণার্থীদের আর্কষণের বিষয় ছিল, যেমনটি, ঠিক আজও একইভাবে আছে। যাদের প্রতি বিস্ময় আজও বিন্দুমাত্র কমেনি, যা শত শত বছর ধরে সারা বিশ্বের কবি, সাহিত্যিক এবং পণ্ডিতদের কল্পলোকের বিষয় হয়ে রয়ে গেছিলো। কারণ, মিশরের এত সব বিদগ্ধ বিস্ময়কর স্থাপত্যের গায়ে বা আঙ্গিনায় খোদাই করা সাংকেতিক হাইরোগ্লিফ লিপিসমূহ (মিশরের বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপত্যের ভিতরে,  চারপাশে খোদাই বা চিত্রিত করে, সাংকেতিক ভাষার মাধ্যমে লিখে রাখা লিপিসমূহ) পাঠ করে, সেসব কিছুর সঠিক অর্থ, যথার্থ ভাবে বুঝতে না পারার কারণে, তাদের ঘটনা ক্রমের বিবরণ, বহুকাল অবধি ছিল বিশ্বের আপামর জনগণের কাছে রয়ে গেছিলো নিতান্তই ভাষা ভাষা, এবং অনুমান এবং কল্পনার বিষয়। সেখানকার বিভিন্ন মন্দিরময় স্থাপত্যকর্ম এবং রাজকীয় সমাধি মন্দিরগুলি আবিস্কারের পর থেকে, সেখানকার আনাচে কানাচে ঘুরে দেখার সুযোগ পেত সবাই, কিন্তু তাদের জীবনে, ধর্মে এবং মৃত্যুর পরের বিষয়ে, সেসবের প্রকৃত ভূমিকা কি ছিল, তা হয়ে উঠেছিল নিতান্তই কল্পনা এবং অনুমানের বিষয়।

সে সময়ের রহস্যপূর্ণ এবং কাল্পনিক পরিবেশ, এক অদ্ভূত কুসংস্কারের জন্ম দিয়েছিল। যেমন ভাবা হত ”ফারাওদের অভিশাপ” অপেক্ষা করছে তাদের জন্য, যারা এইসব রাজকীয় সমাধিমন্দিরে অনধিকার প্রবেশ করবে। কিম্বা, এই যে ”মমির গুড়ো করা পাউডারের বিস্ময়কর এবং ঐশ্বরিক আরোগ্যকর শক্তি আছে।” অবশ্য, শেষ পর্যন্ত ১৮২২ সালে, এই সমস্যার প্রকৃত সমাধান সম্ভব হয়, যখন, ফরাসী মিশর-বিশারদ ”জাঁ ফ্রাশোয়া চ্যাম্পোলিয়ন” মিশরীয় হাইরোগ্লিফ লিপির পাঠ সঠিক ভাবে উদ্ধার করেন, এবং এই সমস্ত স্থাপত্যের অনুসঙ্গ হিসাবে প্রাপ্ত হাইরোগ্লিফ চিত্রলিপির প্রকৃত অর্থ এবং বক্ত্বব্য জগতের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরে, এত দিনকার সমস্যার প্রকৃত সমাধানের পথ বাতলান।

এর পরেও, বলা য়ায়, অনেক আবিস্কার করা বাকি রয়ে গেছে আজও। আজও জানা যায়নি, স্পিংসের কাজ কি ছিল। কারণ, ওল্ড কিংডম (২৬৮৬-২১৮১ খৃঃ পূর্বাব্দ) এর সময়কার বিভিন্ন স্থাপত্যের বিষয়ে, কোনো ইনস্কৃপসন বা এই বিষয়ে প্যপিরাসের ওপর এমন কোনো লেখা আজও পাওয়া যায়নি, যার থেকে, এদের বিষয়ে কিছু জানা সম্ভব হয়। কিন্তু, এর পরবর্তি সময়ের বিভিন্ন স্থাপত্যে পাওয়া শত সহস্র ইনস্কৃপসন এবং প্যাপিরাসে লিখিত হাইরোগ্লিফ লিপিসমূহের পাঠ সঠিকভাবে উদ্ধার করে ইজিপ্টোলজিস্টরা এই সব প্রত্নতাত্বিক সৌধসমূহ, ভ্যালি অফ কিংস আর ভ্যালি অফ কুইন্স এর স্মৃতি স্মারক এবং অন্যান্য মন্দিরগুলির বিষয়ে আমাদের সম্যকভাবে আলোকিত করেছেন। এছাড়াও, এরপর বোটানিস্ট, আ্যান্থ্রোপলজিস্ট, আর্ট হিস্টোরিয়ান, কম্পিউটার এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা মিশরের অতিকায় এবং বিস্ময়কর সব স্মৃতিস্মারকদের বিষয়ে ক্রমে ক্রমে আরো আলোকসম্পাত করেছেন এবং আজও করে চলেছেন। মিশরের ভ্যালি অফ কিংস ও অন্যান্য জায়গার বিভিন্ন সমাধি-স্মৃতি স্মারক এক্সক্যাভেসন করে জানা গেছে, যে, সে যুগের ফারাওরা তথা বর্ধিষ্ণু মিশরীয়রা তাঁদের মৃত্যুর পর এমন একটা জীবন চাইতেন, যা হবে তাঁদের এই পৃথিবীতে জীবিত থেকে তাকে উপভোগ এবং তার উৎযাপনের বিরামহীন সম্প্রসারণ। অর্থাৎ, তাঁরা ধরে নিতেন, এই সব সমাধিমন্দির সমুহের সাহায্যে, তাঁদের জীবন, তাঁদের মৃত্যুর পরেও নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলতেই থাকবে, এবং তা চলবে হয়তো আরও অর্থপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভাবে,  যাতে করে, তাদের সামাজিক যোগাযোগ, প্রতিপত্তি, এমনকি তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিও তাঁদের দখলে থেকে যাবে, বছরের পর বছর ধরে, একই ভাবে। তাই, আমরা আজ, এই সব পিরামিড এবং ভ্যালি অফ কিংসএর সমাধি স্মৃতিসৌধের লিপিসমুহের পাঠ উদ্ধার করে, তাদের থেকে, মিশরের সে সময়ের ফারাওদের জীবন যাপন সম্পর্কে বিস্তৃত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানতে পারি।

প্রাচীন মিশরের মন্দিরগুলি বহুযুগ ধরে সারা বিশ্বের বিদগ্ধ মহলে সমীহ এবং সম্ভ্রম জাগিয়ে চলেছে। আজকের আধুনিক দর্শকরা, এখনও এই সব মন্দিরের চমৎকারিত্ব, বিশালত্ব, সৌন্দর্য এবং সেখানকার দেওয়ালের নিখুত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ রিলিফের কাজে মুগ্ধ হয়ে চলেছেন। এই সব অতিবৃহৎ, অপরূপ স্থাপত্যগুলির বেশিরভাগই পাথরের তৈরি এবং সেগুলির অধিকাংশকেই নির্মাণ করা হয়েছিলো ধুসর মরুভূমির অভ্যন্তরে, যাতে তারা নীল নদের বার্ষিক বন্যার কবলের বাইরে থেকে যেতে পারে বরাবরের জন্য। মিশরের স্থাপত্যের মধ্যে পিরামিডগুলিই সবচেয়ে পুরাতন। এছাড়া, বিভিন্ন জায়গায় মিশরীয় শাসকদের অতিকায় মূর্তিগুলি এবং এখানকার মন্দিরের নিখুত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অঙ্কিত সাঙ্কেতিক চিহ্ন ও চিত্রে শোভিত রিলিফের কাজ সম্বলিত দেওয়াল এবং থামগুলিই প্রাচীন মিশরের মন্দির সমুহের মূল বৈশিষ্ট।          

প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে, প্রাচীন মিশরের চোখ ধাঁধানো এবং চমকপ্রদ উৎকর্ষ লাভ সম্ভব হয়েছিল, যার মূল কারণ এই দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। এই সমৃদ্ধি সম্ভব হয়েছিল সে দেশের অনুকুল পরিবেশ এবং উন্নত চাষবাসের কারণে, আজকে যার পরিচিতি ”নীল নদের দান” হিসেবে। আজকের দিনে মিশরের অর্থনীতিতে, এই নীল নদের যে ভূমিকা, আজ থেকে সেই পাঁচ হাজার বছর আগেও, তা ছিল একই রকম, (যদিও, আজ মিশর সরকারের সব চেয়ে বেশী আয় হয় সুয়েজ খাল থেকে)। নীল নদের অববাহিকায়, তার দুপাশে মানুষের সংঘবদ্ধ বসবাসের শুরু থেকেই কৃষিকাজের প্রথম শুরু। প্রতি বছর নীল নদের বাৎসরিক বন্যা, তার দুকুল ছাপিয়ে, ভাসিয়ে দিত দুপাশের জমি, আর, তারপর বর্ষার শেষে,  সেই বন্যার জলের উর্বর পলিমাটির গুণে, সেই সব জমি সোনার ফসলে ভরে উঠতো। দুপাশে রুক্ষ অনুর্বর মরুভূমির মাঝে, প্রতি বছর নীল নদের দুপাশের জমিতে উৎপন্ন হওয়া সোনার ফসলের দানে মিশরের ভাণ্ডার ভরে উঠতো। উপচে পড়তো তাদের সমৃদ্ধি। আর, এই নীল নদই ছিল তাদের প্রধান রাজপথ। এবং সেজন্যই তাদের দেশে নৌ-শিল্প ফারাওদের সময় থেকেই উৎকর্ষ এবং সমৃদ্ধি লাভ করেছিল।

প্রাচীন মিশরের পুনরাবিস্কার

মিশর সবসময় পরিব্রাজক ভ্রমণকারীদের মনে মনোমুগ্ধকর আবেশের সঞ্চার করেছে। নীল নদের দুপাশের মোহময় প্রাকৃতিক সবুজে ছাওয়া মনোরম শোভা, দু পাশের সবুজ পরিমণ্ডলের পেছনে, দুরে রুক্ষ ধুসর মরুভূমি, আর, তাদের মাঝে দেখতে পাওয়া, অতি প্রাচীন পুরাতাত্বিক নিদর্শনাবলী, যুগ যুগ ধরে, পরিব্রাজকদের চুম্বকের মত মন এবং হৃদয় ব্যাপ্ত করতে কখোনো অপারগ হয় নি। এ এমন এক দেশ, যেখানে, একবার গিয়ে মন ভরবে না। মিশরকে সঠিক ভাবে জানতে এবং চিনতে হলে বার বার যেতে হবে এবং প্রতিবারই নূতন নূতন দিগন্ত উন্মোচিত হতে থাকবে। তাদের জানার বিষয়ে বিশ্বাস আরো গভীর হবে। এর সঙ্গে, ওখানকার লোকেদের সুজন সুলভ বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার এবং তাদের ভদ্র কৌতুকপূর্ণ আপ্যয়নকারী মনোভাব, মিশরের প্রতি আমাদের আকর্ষণ গভীর করবেই।    

খ্যাতনামা গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস(৪৯০-৪২০ খৃষ্টপূর্বাব্দ) মিশরে এসেছিলেন খৃষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকের মাঝামাঝি। তখন থেকেই, গ্রিক ও রোমানরা, পিরামিড এবং ভ্যালি অফ কিংস এর বিষয়ে গভীর ভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তবে, এর পরবর্তীতে, রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর, মিশরে ইউরোপীয়দের আনাগোনা, বেশ কিছুকালের জন্য, বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ইউরোপীয়রা খ্রীষ্টিয় সপ্তদশ শতক থেকে, আবার, মিশরের বিষয়ে আকৃষ্ট এবং অভিভূত হতে শুরু করে এবং পুনরায় তারা মিশরে আসতে শুরু করে। ডোমিনিকান, ফ্রেন্চ, স্কটিশ, আইরিশ, ড্যানিস, ব্রিটিশ এসব বিভিন্ন দেশের ডেলিগেসন এরপর,  সময় সময়, মিশরে আসতে শুরু করে, এবং এখানকার পিরামিড এবং ভ্যলি অফ কিংসএর এই পুরাতাত্বিক স্থাপত্যগুলির নানা বিষয় অনুসন্ধান করতে শুরু করে এবং সেই সকল বিষয় নথিভুক্ত করতে শুরু করে। এবং, তখন থেকেই, ইউরোপ থেকে আগত বিভিন্ন দেশের প্রত্নতাত্বিকদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতা শুরু হয়, এবং সেইসব দেশের প্রত্নতাত্বিকরা, এখানকার বিভিন্ন পিরামিড এবং সমাধিমন্দির থেকে নানারকম অমূল্য প্রত্নতাত্বিক সামগ্রি এবং জিনিষপত্র নিজেদের দেশে নিয়ে গিয়ে নিজেদের মিউজিয়ামে ভরতে থাকে। তবে, এই সব ইউরোপীয়দের মধ্যে, মিশরে প্রথম সার্থক এক্সপিডিশন তথা এক্সপ্লোরেশন করেন, ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্ট।

মিশরের লোয়ার ইজিপ্টে কায়রোর কাছে গিজার পিরামিডগুলি এবং মিডল ইজিপ্টে থিবেশএর কাছে (বর্তমানে লাক্সার) ভ্যালি-অফ-কিংস এবং ভ্যালি-অফ-কুইন্স ছাড়াও সারা মিশরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রচুর মন্দির, যাদের ছাড়া মিশর অসম্পূর্ণ। তবে সেই সব বিখ্যাত মন্দিরগুলির বেশীরভাগই নানা কারণে আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাদের সৌন্দর্য অনেকটাই হারিয়েছে। সেই সব মন্দির গুলির মধ্যে যে মন্দিরটি আজ সবচেয়ে সুন্দরভাবে রক্ষিত হয়েছে সেটিই এডফু মন্দির।

এডফু মন্দিরে যাওয়া

২০শ তারিখে কায়রো পৌঁছে, সেখান থেকে ট্রেনে আসোয়ানে পৌঁছে নাইল ক্রুজে যোগ দিয়েছি আজ তিন দিন হল। তারপর ক্রুজে ঘুরতে ঘুরতে কাল অবধি দেখে নিয়েছি মিশরের প্রাণস্বরূপ আসোয়ান এবং হাইড্যাম, গ্রিকো-রোমান যুগের ফিলে মন্দির, আপার মিশরে নুবিয়ার বিশ্বখ্যাত আবু-সিম্বেল মন্দির, সোনার শহর কোম-ওমবোতে কুমির দেবতা সোবেকএর মন্দির। এরপর আজ ২৩শে ফেব্রুয়ারী সকাল হতেই চলেছি এডফু মন্দির দেখতে।  

ভোর পাঁচটায় ক্রুজের রিসেপসান থেকে ওয়েক আপ কল পাবার আগেই আমাদের ঘুম ভেঙ্গে গেল। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি, জাহাজ ঘাটে দাঁড়িয়ে। তখোনো বাইরেটা বেশ অন্ধকার। তবে ঘাটে চারপাশে বেশ কিছু আলো জ্বলছে। এরপর হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে,  চটপট ডাইনিং হলে গিয়ে চা বিস্কুট খেয়ে এলাম। এরপর, আধঘন্টার মধ্যে প্রাতকৃত্য সেরে রেডি হতে হতে পৌনে ছটা প্রায় বাজলো। রিসেপসানে গিয়ে দেখি সহযাত্রীরা প্রায় সকলেই সেখানে উপস্থিত। গাইডও এসে গেল এরপর এবং আমাদের বললো, আমি জেটিতে যাচ্ছি,  ঘোড়ার এক্কাগাড়ি বলা আছে, আর তা এসেও গেছে এতক্ষণ। আপনারা সবাই এবার আস্তে আস্তে জেটিতে আসুন। আমরা এর পরপরই ঠিক জাহাজ থেকে বার হয়ে, এডফুর জেটিতে নেমে গেলাম। দেখা গেল, ফেরীঘাটে এরকম বেশ কয়েকটা জাহাজ, সবই এরকম ক্রুজ, পরপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর সব জাহাজ থেকেই লোকেরা বার হয়ে জেটিতে আসছে। তারা সকলেই এখন এখানকার এডফু মন্দির দেখতে যাবে।

বেশ কতকগুলো চার সিট ওয়ালা ঘোড়ার গাড়ী সেখানে উপস্থিত। মামুদ গোটা পাঁচ ছয় গাড়ি দেখিয়ে বললো, এরা সবাই আমাদের মন্দির নিয়ে যাবে। আর, যারা যে গাড়িতে যাবে, তাদের আবার সেই এক গাড়িতেই ফিরতে হবে। প্রত্যেক গাড়িতে নাম্বার দেওয়া আছে, সেটা সবাই দেখে নোট করে রাখবেন। আমরা দুজন এবং আরো দুই সহযাত্রী চারজন মিলে একটা গাড়িতে উঠলাম। বেশ সাধারণ মানের এই গাড়িগুলো। মুখোমুখি দুটো সিটের প্রতিটায় দুজন করে বসতে পারবে। সামনে দিকে মুখ করে বসার সিটটা ঠিক আছে, তবে তার সামনের পেছনদিকে মুখ করা সিটটা বেশ ছোট। সামনের দুজনকে বেশ কষ্ট করেই বসতে হল। প্রতিটি গাড়িতে বড় বড় করে নম্বর দেওয়া। গাইড আমাদের বলে দিয়েছে এই নম্বরটা অবশ্যই মনে রাখতে, কারণ এই সকালেও মন্দিরে খুব ভীড় হবে। তাই ফেরার সময় কেউ কারো জন্যে অপেক্ষা করবে না। মন্দির দেখা শেষ হলে যারা যে গাড়িতে যাবে, তাদের সেই গাড়িতেই জাহাজে ফিরতে হবে। আর সকলকেই আটটার মধ্যে জাহাজে ফিরতে হবে। আটটায় জাহাজ ছাড়বে। এই সাত সকালে বেশ ঠাণ্ডা, আর হাওয়াও বেশ ভালোরকমই দিচ্ছে।

এরই মধ্যে সকাল ছটা নাগাদ, আমাদের এক্কা গাড়ি ছেডে দিলো এডফু মন্দিরের উদ্দেশ্যে। গাড়ি একটু গিয়েই ডান দিকে বাঁক নিলো আর এরপর সেভাবেই সোজা রাস্তায় বেশ খানিকটা চললো। রাস্তা বেশ সরু হলেও, দেখা গেল, সেখানে এইরকম ঘোড়ার গাড়ির বেশ ভীড়। আশেপাশে, সামনে পেছনে, বেশ অনেকগুলো ঘোড়ার গাড়ী মন্দিরের দিকে চলেছে। তাড়াতাড়িতে সুয়োগ পেলেই, য়ে যাকে পারছে, ওভারটেক করে এগিয়ে যাচ্ছে। খানিকটা সময় পর পর গ্যাপ ছেড়ে আমরা যাচ্ছি। এই রাস্তাটা দেখে বোঝা গেল, নীল নদ থেকে বেশ খানিকটা দুরেই এই এডফু মন্দির। যাবার পথ বেশ ঘিঞ্জি আর নোংরা। দুপাশে প্রচুর বাড়িঘর আর দোকানপাট, তবে এত সকালে প্রায় কোনো দোকানই এখোনো খোলেনি।। সব দোকানের নামই স্থানীয় মিশরীয় ভাষায় লেখা, তবে একটা চেনা, কলকাতায় দেখা নাম পেলাম এই পথে, একটা মোবাইলের দোকান। একটু পরে আমরা গিয়ে পৌঁছলাম এডফু মন্দিরের সামনে, ঘোড়ারগাড়ির স্ট্যন্ডে। সেখানে, ঘোড়ার গাড়ির ভীড়ে জায়গাটায় একটা গ্যাঞ্জাম তৈরি হয়ে, জট পাকিয়ে আছে। সব গাড়িওয়ালা চাইছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, সওয়ারিদের নামিয়ে দিয়ে, আবার জাহাজ ঘাটে ফিরে গিয়ে, আর একটা ট্রিপ করে সওয়ারি নিয়ে আসতে। আমাদের নামা হ’লে, ঘোড়ার গাড়ির চালক বললো, আমার গাড়ির নম্বরটা দেখে রাখুন। আপনাদের মন্দির দেখা হলে,  আমিই আপনাদের জাহাজঘাটায় ফিরিয়ে নিয়ে যাব। সামনে, খানিকটা দুরে বিশাল উঁচু মন্দিরের সামনেটা দেখা যাচ্ছে। আর, সামনেই একটু ভেতরে ঢুকে ফুটবল মাঠের মত একটা বড় চত্তর। তার একপাশ দিয়ে ব্যারিকেড করে ঢোকার রাস্তা করা হয়েছে। আর তার পাশ দিয়ে নানা রকম মিশরীয় শুভেনিয়ারের জিনিষেপত্রের সার সার দোকান। সেখানে জামা কাপড়, নানা রঙের পাথরের মূর্তি, কিউরিও,  মিশরীয় স্থাপত্যের নানা রকম পুতুল, প্যাপিরাসের মূর্তি এসব বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা, আমরা ভারত থেকে এসেছি বুঝে, ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া, ভেরি ভেরি চিপ, বলে চিৎকার করে ডাকার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে গাইড টিকিট কেটে এনে দিল। টিকিট দেখিয়ে গেট দিয়ে পার হতেই, একটা চারদিক মাটির রঙের বড় বড় পাথরের ইটের পাঁচিল দেওয়া চত্তরে ঢুকলাম। এত সকালে চারদিকে রোদের আলো পড়ে সেটাকে অনেকটা পুরোনো ভাঙ্গচোড়া দূর্গের মত লাগছে। এত বড় জায়গাটা ভীড়ে ভীড়, যেদিকে তাকাই চারদিকে শুধু মাথা। তাদের বেশির ভাগই ইউরোপীয়ান বা আমেরিকান। এখানে গাইড আমাদের সংক্ষেপে এই মন্দিরের বিষয়ে নানা কথা বলে দিলো। এরপর আমরা মন্দির দেখতে এগিয়ে গেলাম। সামনেই একটা ভাঙ্গাচোরা হাইপোস্টাইল হল, আর তার থামগুলোর মাথাগুলো পদ্মের মত আর ছাদটা ভাঙ্গা। ডান দিকে কিছুটা দুরে মন্দিরের প্রবেশ পথ। একটা নিরেট চৌকো পাথরের দরজা, তার বাঁ দিকে একটা ফুট তিরিশেক উচু পাথরের থাম য়ার ওপরটা ফুলের নকসা করা। সেখান দিয়ে ঢুকে আমরা মূল মন্দিরে প্রবেশ করলাম। তবে মূল মন্দিরে ঢোকার আগে তার ইতিহাসের বিষয়ে একটু খোঁজ নেওয়া যাক।

এডফু (পুরাতন মেসেন)  মন্দিরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

২৩৭ খৃষ্টপূর্বাব্দে গ্রীক সম্রাট টলেমি(৩)ইউএরজেটেস এই মন্দিরের নির্মাণ শুরু করেন এবং ৫৭ খৃষ্টপূর্বাব্দে টলেমি(১২) এই মন্দিরের নির্মাণ সম্পন্ন করেন। এই মন্দিরের মুখ্য উপাস্য দেবতারা ছিলেন হোরাস,  হ্যাথোর, হারসোমটাস এবং গ্রীক সূর্য দেবতা অ্যাপোলো। মূলতঃ এই মন্দিরটি গ্রীক এবং মিশরীয় স্টাইলে  স্যান্ড স্টোনে নির্মিত হয়েছিলো এবং লম্বায় ছিলো ৭৯ মিটার,  চওড়া ৭৬ মিটার, এবং উচ্চতা ৩৬ মিটার। এই মন্দিরের দেওয়াল গাত্রের হাইরোগ্রিফ লিপিতে লেখা বিবরণ থেকে, পৌরাণিক মন্দিরের দেশ মিশরের শুধু এই মন্দিরটি নয়, অন্যান্য সব মন্দিরগুলির সম্পর্কেও তাদের নির্মাণ এবং তাদের পৌরাণিক গুরুত্বের বিষয়ে ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গক্রমে ইংল্যান্ডের একটি বিখ্যাত স্থাপত্যের উল্লেখ এইখানে করতে চাই। ইংল্যান্ডের পশ্চিম ইয়র্কশায়ারে লিডস এর হোলব্যাক শহরে, টেম্পল ওয়ার্কস নামের ভবনটি এই শহরের সর্বোত্তম তথা একমাত্র গ্রেড ওয়ান ভবন। ইন্জিনিয়ার জেমস কম্বের পরিকল্পিত নকসায়, জন মার্শাল এর নেতৃত্বে ১৮৩৬ সাল থেকে ১৮৪০ সাল এই পাঁচ বছর ধরে এটি নির্মাণ করা হয়। বলার বিষয় এই যে, মিশরের এই এডফু মন্দিরের হুবহু অনুকরণে ইংল্যান্ডের লিডসের এই নির্মাণটি করা হয়।

মন্দির দর্শন

এডফুর মূল মন্দিরের প্রবেশপথে, হাইপোস্টাইল হলের সামনেই রয়েছে এই মন্দিরের মুখ্য দেবতা বাজপাখিরূপী হোরাসের এক ফুট বারো উচু গ্রানাইটের মূর্তি। প্রচুর লোকজন তার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত। সামনে এক একশো কুড়ি ফুট উঁচু, আয়তকার, পাথরের দেওয়াল, যার দুপাশটা একই রকম উচু আর, ঠিক মাঝখানটা একটু নিচু, আর সামনে নিচে ঠিক মাঝখান দিয়ে এই মণ্দিরে ঢোকার রাস্তা। সামনে মাঝখানের উচ্চতায় বাঁদিকে এবং ডানদিকে, দুদিকেই বিরাট বিরাট তিনটি করে মূর্তি খোদাই করা। একদম ওপরে দুদিকেই দুটি সারির প্রতিটিতে এগারোটা করে মূর্তি খোদাই করা।

আর সামনে নিচে দরজার ঠিক ওপরে একটি বড় পাখির রঙ্গীন ছবি এবং তার দুপাশে দুটি সাপের ছবি। আর তার আর একটু ওপরে আরও এক সারি ছবি। এবং দুপাশে ও অনেক ছবি খোদাই করা। ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, ভেতরে দুপাশে অনেকগুলো বড় এবং মোটা থামওয়ালা হল ঘর। সিলিংয়ে এবং চারপাশে থামের গায়ে অসংখ সুন্দর ভাবে অঙ্কিত এবং খোদিত অপূর্ব সব ছবি মন ভরিয়ে দেয। আর হাইরোগ্লিফ লিপিও প্রচুর।

এরপর, এই দরজা দিয়ে (যার ওপরের সিলিং দারুণ কারুকাজ করা ছবিতে ভর্তি) এগিয়ে গিয়ে ভিতরে ঢুকে আমরা একটা চারদিক ঘেরা চত্তরে উপস্থিত হলাম। সামনে তিন দিকেই বেশ উচু (প্রায় চল্লিশ ফুট হবে) উচু থামওয়ালা হাইপোস্টাইল হল। সেসব থাম এবং দেওয়াল অসংখ্য ছবিতে ভরা এবং থামের ওপরে ফুলের কাজের ডিজাইন। পেছনের দেওয়ালটাতেও সামনের মত একইরকম ছবি খোদাই করা। সামনের হলের ঠিক মাঝখান দিয়ে এই মন্দিরের মূল কক্ষের প্রবেশপথ। এই প্রবেশপথের সামনেও একটা বড় বাজপাখিরূপি হোরাসের মূর্তি। ঢুকে সামনে একটা হল ঘর। এখানকার এই মন্দিরের শৈল্পিক কাজই আজ মিশরের সবচেযে নিখুত এবং সুন্দর। ঢুকে দুপাশে বেশ উচু এবং বড় বড় থাম। এই থামগুলোতে এবং দুপাশের দেওয়ালে অসংখ্য সুন্দর সুন্দর এবং বেশ নিখুতভাবে আঁকা এবং খোদাই করা ছবিতে ভর্তি। এখানে রাজার শত্রুদের শায়েস্তা করা হচ্ছে, এরকম ছবির সংখ্যা প্রচুর। এই হলের একদম ওপরে,  পরপর ঘুলঘুলির মত ফাঁক রয়েছে, যাতে, ভিতরে কোনো জানালার ব্যবস্থা না থাকলেও, ওপর থেকে সেই ঘুলঘুলির ভিতর দিয়ে সূর্যের আলো ভেতরে এসে পড়ে এবং ভেতরে আলোর কোনোরকম অভাব থাকে না। মাঝে দুপাশে আরো গোটা ছয়েক ঘর, আর, সব ঘরের দেওয়াল এবং সিলিংযের সর্বত্র একই রকম নিখুত ছবিতে ভর্তি, যাদের বেশ কিছু জায়গায় ছবিগুলি সোনার মত ঝকঝক করছে। এত ছবি দেখে আশ মেটে না এবং দেখে শেষও করা যায় না। আর ঠিক সামনে গর্ভগৃহের বাম পাশে এই মন্দিরের গর্ভগৃহের একদম ভেতরে রয়েছে একটি অদ্ভূত মূর্তি যার ওপরটা একটা জন্তুর মুখ, বেড়াল বা ভামের মত, নাকটা ভাঙ্গা, আর নিচেটা উল্টানো কারুকার্য করা চালচিত্রের মত, আর ঠিক মাঝখানে একটা রঙ্গীন ছবি।

এখানে, খুব চকচকে ধুসর স্ফটিক শিলায়(সায়েনাইট) নির্মিত একটি মোনোলিথিক পাথরের বেদীর ওপর রয়েছে এই মূর্তিটি, (যেটিকে আমরা খানিকটা ভাঙ্গা অবস্থায় দেখতে পেলাম) সেটিই এই মন্দিরের সব চেয়ে পুরোনো অংশ। গ্রীকো-রোমান যুগের রাজারা এই মূর্তিটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেন, কারণ, তাঁরা অন্য সব জায়গার মত, এই এডফু মন্দিরের দেবতাদেরও, তাঁরা খৃষ্টান না হওয়ার কারণে, হীণ চোখে দেখতেন। কালচে লাল পাথরের গর্ভগৃহের ঠিক মাঝখানে একটা সুন্দর কাজ করা উচু বেদি, কিন্তু তার ওপরটা ফাঁকা, কিছু নেই সেখানে। এই বেদির সামনে ভিতের কাছাকাছি নিচের দিকে রয়েছে এক পবিত্র ছোট নৌকার ছবি। আর ডান দিকে, এক প্যাসেজে একটু ঢুকে একটা পাথরের ঘোরানো সিড়ি ওপরে উঠে গেছে, যেটি ভালো ভাবে খেয়াল না করলে বোঝাই যাবে না। সিড়ি দিয়ে বেশ খানিকটা ওপরে ওঠা যায়, তবে, ওপরে খানিকটা উঠে তারপর রাস্তা বন্ধ করা। এখানকার দেওয়াল এবং সিলিং অসংখ খুব সুন্দর সুন্দর ছবিতে ভরা, এবং খুব বেশী লোক এপথে ঢোকে না বলে, এখানকার কাজগুলো এখনও আরও নিখুত এবং সুন্দর রয়েছে, কোনটা এতটুকু নষ্ট হয়নি এত দিনেও। এই এডফু মম্দিরের বিভিন্ন দেওয়াল চিত্রে, হোরাস আপার এবং লোয়ার মিশরের প্রতিভূ হিসাবে, একইসঙ্গে দুইটি মুকুট পরেছেন। এছাড়া, এই মন্দিরের দেওয়ালে, বার্ষিক বিজয় উৎসব পালনের দৃশ্যও রয়েছে, যেখানে হোরাস দশটি হারপূণ দিয়ে জলহস্তিরূপী সেথকে বিদ্ধ করছেন। এই হারপুণ দিয়ে বন্য জন্তু হত্যা, তা সেটি প্রতীকি বা বাস্তব, যাই হোক না কেন, সেটি অরাজকতার বিরুদ্ধে সুশাসনের বিজয় চিহ্নিত করতো। এখানেই জানা গেল, মিশরে যত মন্দির রয়েছে, তাদের মধ্যে এই এডফু মন্দিরই বর্তমানে সব চেয়ে ভালো ভাবে রক্ষিত এবং অসামান্য সুক্ষ দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য মণ্ডিত এবং সবচেয়ে সুন্দর।

মিশরের এই এডফু মন্দির আজও প্রায় অক্ষত রয়েছে। এবং প্রাচীন মিশরের সর্বোত্তম নিদর্শণ হিসেবে সারা বিশ্বে এর পরিচিতি। এর স্থাপত্যের পুরাতাত্বিক উৎকর্ষ এবং গুরুত্ব, এবং এই মন্দিরের সর্বোচ্চ মানের রক্ষণাবেক্ষণ, এই মন্দিরকে মিশরের পর্যটনের মূল কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরেছে, এবং নীল নদের বুকে ভেসে বেড়ানো সব ক্রুজ জাহাজগুলির অবশ্যগন্তব্য স্থান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।  

সকাল পৌনে আটটার মধ্যে আমরা এই মন্দির যতটা সম্ভব দেখে বেরিয়ে আসলাম। এরপর আবার সেই আগের টাঙ্গাতে চেপে ফিরে এলাম আমাদের জাহাজঘাটে। এরপর সবাই জাহাজে পৌছে গেলে, জাহাজ ছেড়ে দিল। এবার আমরা রওনা দিলাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্য লাক্সারের উদ্দেশ্যে।

ছবি: প্রকাশ চট্টোপাধ্যায় | Pixabay

Exit mobile version