ট্রেন্ড তো ভায়া মহাভারতের টাইমেই শুরু হয়েছিল – দলবাজি।

কৌরবদের দিকে একদল। পাণ্ডবদের দিকে আরেকদল। শ্রীকৃষ্ণ পাণ্ডবদের সাইড থেকে খেলবেন ঠিক করলেন, তাই পাণ্ডবরা হয়ে গেলো ন্যায়ের সাইড আর দ্রোণাচার্য, পিতামহ ভীষ্ম, কর্ণ অন্য সাইডে – টীম-অন্যায়।

ভীষ্ম, কর্ণ, দ্রোণাচার্য মতো লোকেদের পুণ্যের কিছু অভাব ছিল না, তাও দুর্যোধনের ঘ্যানঘানিতে এবং নিজেদের বোকা বুদ্ধির পরিচয় কে স্ট্যাম্প পেপার দিয়ে অফিসিয়াল করে টীম-অন্যায় থেকে খেলবেন বলে ঠিক হলো।

বিবর্তনবাদ

সৃষ্টিকর্তা একটা জীবন্ত অ্যামিবা বানিয়ে সেই যে একটা পাইলট স্টাডি করেছিলেন, তার পর থেকে ইভোল্যুশন তত্ত্বের মধ্যে দিয়ে গড় গড় করে জীব-জন্তু বেরিয়েই চললো, বেরিয়েই চললো। শেষে এই মাত্র কয়েক হাজার বছর আগে, ল্যাজ – ট্যাজ খসিয়ে মানুষ নামের এক অনাসৃষ্টি, অস্বাভাবিক, এক ভীষণ জন্তু বেরিয়ে এলো – যে জন্তু রা নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই করে। নিজেরাই নিজেদের জন্ম দেয় তারপর যন্ত্র-পাতি দিয়ে নিজেদেরকেই মেরে ফ্যালে।

অ্যামিবা থেকে পিঁপড়ে, পিঁপড়ে থেকে বাঁদর কেউই মানুষের মতো এতো কম বুদ্ধি নিয়ে জন্মায়নি, যারা নিজের প্রজাতিকে নিজেরাই ধ্বংস করে। সৃষ্টিকর্তার কাছেও আর কোনো রিভার্স টেকনোলজি ছিল না, যে এই ভয়ঙ্কর, প্রকৃতিবিরুদ্ধ মানুষদের আবার বাঁদর এবং বাঁদর থেকে অ্যামিবার দিকে ইউ টার্ন করানো যায়।

অ্যামিবা , পিঁপড়ে, পোকা-মাকড়, সাপ, ব্যাঙ – আরও কোটি-খানেক জীব-জন্তু আরও যারা বিবর্তন তত্ত্বের মধ্যে দিয়ে বেরোলো, তারা নিজেদের রাজত্বে জাহাঁপনার স্টাইলে বিরাজমান। খালি মানুষই আছে, যারা নিজেদের এবং আসে-পাশে সবারই অস্তিত্বের জন্য এক বিপদজনক সৃষ্টি।

মানুষ প্রথমে কিছুদিন বনে বাদাড়ে ঘুরলো, তারপর সেই যে জামা-কাপড় পরে, কাগজে ছাপানো কিছু কিছু লেখা পড়ে, নিজেরাই নিজেদের শিক্ষিত নাম – টাম দিয়ে শেষে এখন এই সোশ্যাল- মিডিয়ার যুগে হাজির হয়েছে। পুরাণের কিছু- কিছু মুনি-ঋষি কলিযুগ পর্যন্ত ক্যালকুলেশন করে উঠতে পেরেছিল, এখন পোস্ট-কলিযুগ চলছে।

এই মানুষ নামের অনাসৃষ্টি সৃষ্টিকর্তা কে কাঁচকলা দেখিয়ে এবং নানা তর্ক-বিতর্কের জাল বিছিয়ে, সৃষ্টিকর্তা র এক্সিস্টেন্সকেই ভুস করে উড়িয়ে দিলো। যার পেটে যত বিদ্যে সে তত জোর গলায় চেঁচামেচি শুরু করলো। কম বিদ্যের মানুষগুলো মন্দির, দরগায় মাথা ঠেকিয়ে বসে রইলো, যত না বিশ্বাসে, তার চেয়ে আর কোনো যুক্তি তক্কো খাড়া করতে পারলো না বলেই।

পোস্ট কলিযুগের পরের টা হলো দলবাজি। সাইন কার্ভের গ্রাফের মতো মহাভারত থেকে চলছে, যদি বলি আমি নিউট্রাল , নিউট্রালদের কেউ পাত্তা দেয় না, কোনো ভ্যালু নেই। কৌরব নয়তো পাণ্ডব, মোদী নয়তো দিদি, ব্রেক্সিট বা রিমেন ,ট্রাম্প বা বিডেন , কৃষি বিল নয়তো প্রটেস্ট, বাংলা মিডিয়াম বা ইংলিশ মিডিয়াম দু-ভাগে বিভক্ত ট্রাইবস আমরা সবাই। পোলারিটি না দেখালে কেউ পাত্তাই দেবে না । হোয়াটস্যাপ গ্রুপে ঢুকতে গেলেও দল – বাজির এন্ট্রান্স টেস্ট পাস করতে হয়।

যদি সত্যি বলি, এই ছেলেমানুষী মূল্যহীন, মানুষের এই মূল্যবোধ থাকা দরকার যেখানে ভালো – খারাপ বোঝার বুদ্ধি যেন রাজনৈতিক না হয়, ধার্মিক না হয়, বিবর্তন বাদের কোথাও ধর্ম নেই, রাজনীতি নেই, ভৌগোলিক বিবাদ নেই, আমরা একই প্রজাতির, একই কাঠামোয় বানানো সৃষ্টিকর্তার একই সৃষ্টি।

কত লক্ষ বছর পেরিয়ে আমরা সত্যিই অ্যামিবার দেহের খোলস ছেড়ে এই মানুষের দেহের দখল নিয়েছি। অপরিসীম ক্ষমতা এই দেহের, মনের এবং শরীরের।

সর্বশ্রেষ্ঠের আসন গ্রহণ যেমন করেছি, সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যবহার-টুকুও কেন দিয়ে দিই না জগতের কল্যাণে। থাকলে তো আমাদেরই থাকবে।

ছবি :PIXABAY

LET’S KEEP IN TOUCH!

We’d love to keep you updated with our latest news and offers 😎

We don’t spam! Read our privacy policy for more info.