স্নানের পর সব স্নানার্থীরা বড়ে হনুমানজি  দর্শন করতে যান। মেলার সময়ে হোক বা না  হোক। এই  বিশাল আকারের  মূর্তি  তাই এটাকে বলে বড়ে হনুমানজি। এটা দাঁড়ানো নয় বরং শোয়া তাই অনেকে আবার লেটেওয়ালে ( শয়ন করা) হনুমানজিও বলে । এই মূর্তি নাকি গঙ্গার জল যখন সরে গিয়ে অন্যদিকে চলে যায় তখন পাওয়া  গিয়েছিলো। কে গড়েছে বা কোথায় ছিল বা কি ভাবে কে এনেছিল তার কিছুই জানা যায়না। 

এই কুম্ভের সময়ে নৌকো করে যমুনার ঘাট থেকে পাড়ে নৌকা নিয়ে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করা ছিল। কারণ পাস দিয়ে বিরাট এক দড়ি দিয়ে প্লাস্টিকের সিলিন্ডার গুলোকে বেঁধে বেড়া বানানো হয়েছিল জলের উপর। সঙ্গমে চান করে ওপারে যাবার কোনো উপায়ে ছিলোনা। তাই আমার সেটা হলোনা। অন্য পাড়ে কিছুটা গিয়ে নেবে পড়লাম মেলার কিছুটা দেখবো বলে। এতো বৃহৎ মেলা আর এতো লোকের সমাগম অথচ খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ভালো ব্যাবস্থা নিয়েছে দেখলাম যেটা সাধারণত রাস্তায় ও দেখা যায়না।আসল কথাটা বলা হয়নি। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি এই মেলার জন্যেই বিরাট জায়গা নিয়ে জমি খালি পড়ে থাকে মানে রাখা থাকে। কোনো মতেই কেও এসে যে কোনো কারণে দখল করার উপায়ে নেই। কাছেই মিলিটারি ছাউনি আছে । তারাই দেখাশোনা করে। মেলা না থাকলে শুধু দূর দিগন্ত অবধি খালি জমি দেখা যায়। কোনো রকমের কাউকে আস্তানা গড়তে দেয়া হয়না , এমনকি কিছু দিনের জন্যে ও নয়।

তবে  মেলার সময়ে একটা ছোট শহর গড়ে ওঠে ১-২ মাসের জন্যে । মেলা শেষ হলেই জমি খালি পড়ে থাকবে। পূর্ণ কুম্ভ ও অর্ধ কুম্ভ ১২ ও ৬ বৎসরের জন্যেই হলেও , প্রতিবছর কিন্তু মাঘ মেলাও হয়ে আর সেই  জন্যেও প্রচুর লোকের সমাগম হয়ে থাকে। তখন অনেক সাধু-সন্তদের আখাড়া, ক্যাম্প , তাঁবু ইত্যাদির অস্থায়ী ভাবে  নির্মাণ করা হয়। এই নতুন বড় একটি শহর গড়া হয়েছে বলে এটা কে কুম্ভ-নগরী বলা হয়েছে । নগরের থেকে ছোট হলে হিন্দি তে বলে নগরী।কিন্তু আর এক দিকের পাড়ে যাবার অসুবিধা ছিলোনা আর সেই দিকে অনেগুলো ক্যাম্প করে নানা রকমের  প্রদর্শনীর ব্যাবস্থা করা হয়েছিল। চমৎকার এক-একটা  তাঁবুর সাজ সজ্জা , সবই কিন্তু কুম্ভমেলা সম্পর্কিত । তাই আমরা নৌকাওয়ালা কে বলে পাড়ে নেমে পড়লাম , মেলার প্রদর্শনী দেখার জন্যে। তার আগে স্নান করে কিছু খাবার উদ্দেশ্যে একটা তাম্বুতে ঢুকলাম যেখানে বেশ ভালো খাওয়াদাওয়ার ব্যাবস্থা ছিল। তখন বেশ বেলা হয়েছে আর রোদ্রের তেজের সাথে গরম ও বেড়েছে।

যাই হোক কিছু স্ন্যাকের অর্ডার দিয়ে একটা টেবিল এ বসলাম। সেই টেবিল এ দেখলাম কয়েকজন বিদেশী পুরুষ ও মহিলা , যদিও সবাই তিলক লাগানো আর ভারতীয় ভাবে জামা কাপড় ও সাড়ি পরেছেন পুরুষ ও মহিলারা। কিন্তু অন্য ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছে । ওদের দলের একজন ভালো হিন্দি বলতে পারেন দেখলাম আর সেই ওদের হয়ে খাবারের অর্ডার  দিচ্ছেন। জিজ্ঞাসা করলাম তারা কি ভাষা বলছে ? তারা বললো , স্প্যানিশ। কিন্তু দেখে মনে হলোনা যে তারা স্পেনের এর মানুষ। আমি অনেকবার স্পেনের নানা জায়গায় বেড়িয়েছি , তাই জিগ্যেস করলাম, “আপনারা  কোথা থেকে এসেছন?” তাঁরা জানালেন, “কোলোম্বিয়া থেকে।” খাবার পর একটা তাম্বু তে ঢুকলাম , সেটাকে একটি সাধুর আশ্রম হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে। বড় করে কুম্ভ লেখা ছিল । ছবি তুলাম ! তারপর আরেকটা তাম্বুতে ঢুকে সেখানে গঙ্গা নদীর নানা রকমের  প্রদর্শনী দেখলাম ।  তারপর আরেকটা প্রদর্শনী গঙ্গা এবং কুম্ভ দিয়ে করা। গঙ্গা ও কুম্ভর মডেলের সাথেও ছবি তুললাম.। তারপর বাড়ি যাবার পালা আর তার জন্যে অনেকটা রাস্তা হেঁটে অটো রিক্সা পেলাম।   আর বাড়ি ফিরলাম এই আশায় যে আবার পরের দিন বড়ো হনুমানজির দর্শন করতে যেটা আজকে করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি ! (চলবে )🙏

চতুর্থ পর্ব

LET’S KEEP IN TOUCH!

We’d love to keep you updated with our latest news and offers 😎

We don’t spam! Read our privacy policy for more info.